তাবলীগ জমাআত সম্পর্কে কিছু অবান্তর প্রশ্ন ও তার জবাব ।

তাবলীগ জমাআত সম্পর্কে কিছু অবান্তর প্রশ্ন ও তার জবাব ।

লেখাটির উদ্দেশ্যঃ ব্লগিং আর ফেসবুক,ইন্টারনেট এর সামান্য অভিজ্ঞতায় যা জানতে পেরেছি তা হলো, সত্য-মিথ্যাকে গুলিয়ে ফেলে কিংবা মিথ্যার আঘাতে সত্যকে নিষ্পেষিত করে ধোঁকাবাজি করাই অনেকের নিকট ব্লগিং-এর স্বার্থকতা। এমনই কিছু ‘ব্লগার-কলঙ্ক’ বিশ্বজনীন “দাওয়াত ওয়া তাবলীগ জামাত”এর অবিতর্কিত মেহনতের সমালোচনায় পেশাদারী মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন, এবং মিমাংসিত কিছূ অবান্তর প্রশ্নের অবতারণা করে সরলমনা দাঈ ও মুবাল্লিগদের সাথে প্রতারণার পাঁয়তারা করছেন। এমতাবস্থায় আমার উপর ওয়াজিব হয়ে পড়েছে, আমার সাধ্যানুযায়ী এসব মিথ্যাচারের কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক জবাব দিয়ে সর্বসাধারণের আকীদা সংশয়মুক্ত রাখা। তাই সিরিজ আকারে সেই সব বানোয়াটি আপত্তির যথাযথ জবাবের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সব নেক আমলকে কবুল করুন। আমীন।
বলে নিতে চাইঃ “দাওয়াত ওয়া তাবলীগ জামাত”এর ভাইদের কথা অত্যন্ত সাবলীল, বিনয়ী, নম্র ও মিষ্টি হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে আমি আমার উত্তরপর্বে অনেক ক্ষেত্রেই চরম ভাষা ব্যবহার করেছি। কারণ,
১) আমি তাদের মত এখনো অত ভালো হতে পারি নাই। শুধু সত্যের পক্ষাবলম্বনে আমাকে তাদের পক্ষে কলম ধরতে হলো।
২) বাতিলের মুকাবেলা করার জন্য একটু কঠিন হাতিয়ার ব্যবহার না করলে সামান্য সুযোগে আঁধমরা সাঁপের ফুঁসে ওঠার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই সর্বশান্ত না হওয়া পর্যন্ত বিনয়ী ও নম্রতার গুণকে আপাতত বিশ্রাম দেওয়া হলো।
বলাবাহুল্য, আমার এই পোস্টটি সূরা নাহলের ১২৫ নং আয়াত অনুযায়ী হিকমতপূর্ণ দাওয়াত নয়, বরং একই আয়াত অনুযায়ী নিরুত্তরকারী জবাব। তাই ভিন্নতার জন্য আমি দায়মুক্ত।
একটি স্বীকারোক্তিঃ এ লেখাটির একটি বিরাট অংশ আমার একাধিক শ্রদ্ধাভাজন উস্তাদের প্রবন্ধ থেকে গৃহিত। ঈষৎ পরিমার্জন ও ব্লগে প্রকাশের উপযোগী করে প্রকাশ করা হলো।
“দাওয়াত” একটি আরবী শব্দ, যার অর্থ ডাকা, আহবান করা। ইসলামের দাওয়াতের সারকথা হচ্ছে, মানুষকে দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তির দিকে আহবান করা।
তদ্রুপ “তাবলীগ”ও একটি আরবী শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বাণীসমূহ অবিকলভাবে আল্লাহর বান্দা ও রাসূলের উম্মতগণের নিকট পৌছে দেওয়া।
আর এ মহত দু’টি কাজ আঞ্জাম দেওয়ার জন্যই বর্তমানে বিশ্বের সর্ববৃহত মুসলিম জামাতকে “দাওয়াত ওয়া তাবলীগ জামাত” বলা হয়।
প্রসঙ্গতঃ বলা প্রয়োজন যে, “দাওয়াত ওয়া তাবলীগ জামাত” এটি কোন স্বতন্ত্র দল, গ্রুপ বা গতানুগতিক সংগঠন নয়, বরং এটি হচ্ছে একটি নীরব বাতিলঘাতী আন্দোলন ও অত্যাসম্ভী বিপ্লব। এমনকি এই দায়ী ও মুবাল্লিগ জামাতের গতানুগতিক কোন প্রতিষ্ঠাতা, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইত্যাদী কোন ব্যক্তিও নেই। বরং যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই মুবারক নবুওয়তী জিম্মাদারীকে পূণঃবিন্যস্ত করেছেন, তিনি সকল আত্মকেন্দ্রিকতার সীমা পেরিয়ে এবং নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেকের গণ্ডি ছাড়িয়ে সরাসরি সীরাতে রাসূল, হায়াতে সাহাবা এবং পরবর্তী দাঈ-ইলাল্লাহদের যুগের দাওয়াতের ইতিহাসের প্রতি গভীর মনোনিবেশ করেছেন। পাশাপাশি সমাকালীন যুগশ্রেষ্ঠ ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় উলামায়ে কেরাম ও মুরুব্বীদের সঙ্গে মাশওয়ারা ও মতবিনিময় করেছেন। এরপর এসবের আলোকেই বর্তমান কর্মপদ্ধতিটি প্রস্তুত করেছেন।
বর্তমানেও এই জামাতে কোন পদনির্ভর আসন নেই। একজন মুখলিস আমীরের পূর্ণ আনুগত্যে ইখলাসের সাথে সকল দাঈ ও মুবাল্লিগগণ বিশ্বব্যপী আপন জিম্মাদারী পালনার্থে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এমন ইখলাস ও অনাড়ম্বরতার নযিরবিহীন নমুনা দেখাতে গোটা দুনিয়া বারবার ব্যর্থ হয়েছে, ব্যর্থ হয়েছে দুনিয়াভিত্তিক ও দুনিয়াকেন্দ্রিক দলগুলো। পার্থিব সার্থবাদীরা এমন নূরানী পরিবেশ ও নূরানী শাহীদারী জনমেও দেখেনি। তাই অনেকটা হিংসা পরায়ণ হয়েই ক্ষেপে ওঠে আল্লাহর নিরীহ এই মুখলিস বান্দাদের উপর।
অন্যান্য জোট বা সংঘের চেয়ে এই জামাতটি এজন্যই অনন্য বৈশিষ্ট ও স্বতন্ত্র আবেদনের অধিকারী। কারণ, বর্তমান পৃথিবীতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য সংঘ, সংগঠন এবং সভা-সম্মেলনের কোনো অভাব নেই। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এত বেশি সভা-সমাবেশ নিয়মিত বা তাৎক্ষণিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়, যার হিসাব রাখাও অসম্ভব। এসব সম্মেলনের উদ্দেশ্য যদি হত অন্তত মানুষের পার্থিব কল্যাণ সাধন, তবুও একটা কথা ছিল। কিন্তু তা নয়। এসবের আসল উদ্দেশ্যই হল শক্তিধরের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও শক্তিহীনের ক্ষতি সাধন। যেখানে সম্মেলন ও সংঘবদ্ধতার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত দুর্বল ও অসহায়ের সাহায্য এবং কল্যাণের কাজে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রদান সেখানে এসবের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে সম্পূর্ণ বিপরীত। অর্থাৎ শক্তিশালী জালেমকে সমর্থন দেওয়া আর দুর্বল নিপীড়িতদের অসহায়ত্বকে দীর্ঘায়িত করা। আর তা এমনই সূক্ষ্ম কৌশলে যে, মজলুমের ‘আহ’ করার বা তার প্রতি কৃত-অন্যায়কে অন্যায় হিসেবে অনুভব করারও সুযোগ থাকে না। এটাই বর্তমান সময়ের সংঘ ও সংগঠনগুলোর নীতি। সৌভাগ্যবশতঃ দু’একটি সংগঠন যদি এমন পাওয়া যায়, যারা সেবামূলক মানসিকতা নিয়ে কাজ করে, তবে তাদেরও উদ্দেশ্য হয়ে থাকে শুধু মানুষের পার্থিব উন্নতি, যার সম্পর্ক শুধু মানুষের দেহের সাথে। প্রশ্ন এই যে, রক্ত-মাংসের সঙ্গে যুক্ত এ দেহটিই কি প্রকৃত মানুষ? তাহলে অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে মানুষের পার্থক্য কী থাকল? মনুষ্যত্বই তো মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য।
আজ বস্তুবাদী চিন্তা এবং অর্থ ও পদের লালসা এতই প্রবল হয়ে উঠেছে যে, প্রায় সকলেই বিশেষত ক্ষমতার মসনদে আসীন ব্যক্তিরা মনুষ্যত্বের বিকাশ ও পরিচর্যা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে একেবারেই ভুলে গেছে। তাদের সম্পূর্ণ চিন্তাশক্তি ও কর্মশক্তি এই আসল সমস্যার বাইরেই খরচ হয়ে যায়, অথচ মনুষ্যত্বের অভাবই হল সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এর যথার্থ সমাধান ছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো সমস্যার সমাধান তো দূরের কথা, সামাজিক, পারিবারিক বা ব্যক্তিগত সমস্যার ও কোনো সমাধান সম্ভব নয়। অথচ কিছু সাহসী ও সৎ চিন্তাশীল মানুষ যখন এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন তখন তাদের আহ্বানকে নিতান্ত অপরিচিত মনে করা হয় এবং তাদের উদ্যোগ-ইজতিমাকে অর্থহীন ও অপ্রয়োজনীয় ভাবা হয়। এ যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সেই বাণীরই বাস্তব চিত্রঃ
بدأ الإسلام غريبا و سيعود كما بدأ، فطوبي للغرباء
ইসলামের সূচনা হয়েছিলো অপরিচিত অবস্থায়, এবং তা অচিরেই সেই অপরিচিত অবস্থায় ফিরে আসবে। সুতরাং সেই অপরিচিত সময়ে যারা অপরিচিত থেকেও ইসলামকে আঁকড়ে পড়ে থাকবে, তাদের জন্য মহা-সুসংবাদ। আলহাদীস।
প্রকৃত মানবতা বা ইনসানিয়াতের কয়েকটি মৌলিক বৈশিষ্ট হলোঃ
১) খালিকের মা’রিফাত অর্জন (সূরা যারিয়াত, আয়াতঃ ৫৬)। কেননা, এ তো সহজ কথা যে, ইনসানকে সবার আগে পেতে হবে সৃষ্টিকর্তার পরিচয় এবং তাঁকে হতে হবে সকল সৃষ্টির প্রতি দায়িত্বশীল।
২) হৃদয়-জগতের পবিত্রতা (সূরা আ’লা, আয়াতঃ ২৪, সূরা শামস, আয়াতঃ ৯)।
৩) চিন্তার বিশুদ্ধতা ও বুদ্ধির পরিশুদ্ধতা (সূরা বাকারাহ, আয়াতঃ ২৬৯)। যেন সবাই ক্ষণস্থায়ীর জন্য চিরস্থায়ীকে বিসর্জন দেওয়ার নির্বুদ্ধিতা থেকে রক্ষা পেয়ে যায, এবং সৃষ্টি জগতের বিভিন্ন রহস্য উদঘাটনের গর্বে আত্মহারা হয়ে কিংবা চরম গাফলত ও উদাসীনতায় আত্মবিস্মৃত হওয়ার লজ্জায় নিমজ্জিত থেকে কেউ যেন পরকালীন প্রস্তুতি গ্রহণে অবহেলা না করে বসে।
৪) আভিজাত্য, উন্নত চরিত্র ও উত্তম আখলাকের অধিকারী হওয়া (সূরা আলু ইমরান, আয়াতঃ ১৫৯)।
৫) আমানতদারী (সূরা মু’মিনূন, আয়াতঃ ৮)। খালেক ও মাখলুক প্রত্যেকের আমানত আদায় করার মানসিকতা সৃষ্টি করা।
সকল পেরেশানী, যাকে প্রকৃত পক্ষেই পেরেশানী বলা যায়-তার সমাধান ইনসানকে ইনসানিয়াত শেখানোর মধ্যেই নিহিত রয়েছে। অথচ এই সহজ সরল সাদামাঠা কথাটি বোঝতেও ঐসব ডবল শিক্ষিতদের পক্ষে সম্ভব নয়, যারা আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম-এর শিক্ষার সাথে জানাশোনাও রাখে নি এমনকি জানার আগ্রহও যাদের নেই। আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালাম-এর মধ্যে সর্বশেষ যিনি প্রেরিত হয়েছেন, তিনি হলেন মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি ব্যাপকভাবে সকল মানুষের প্রতিই প্রেরিত হয়েছেন। স্থান-কাল-পাত্র-গোত্র-বর্ণ ইত্যাদি সকল সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে তিনি সবার জন্যই রাসূল। তাঁর আনীত শিক্ষা ও নির্দেশনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া ছাড়া এই সত্য উপলব্ধি করা আদৌ সম্ভব নয়। শুধু ঈমানের সম্পদে সম্পদশালীরাই এই মহাসত্য উপলব্ধি করতে পারেন এবং ঈমানের মিষ্টতা যিনি যে পরিমাণ অর্জন করেছেন তিনি ততটা গভীরভাবে তা উপলব্ধি করে থাকেন। বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যাবে, আজ যারা উন্নতি-অগ্রগতির সবচেয়ে বড় দাবিদার এবং মানবতার শিরোপা যাদের অধিকারে, তারাই সবচেয়ে বেশি মানবতার দুশমন। তো যে নিজেই রিক্তহস্ত সে অন্যকে কী দিতে পারে? সারকথা এই যে, মনুষ্যত্বের অভাবই বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা আর এই বাস্তব সমস্যার একমাত্র সমাধানের ব্যাপারে যদি কিছু চিন্তা-ভাবনা এবং সাধ্যমতো কিছু কাজ হয়ে থাকে তবে তা অবশ্যই ঈমানওয়ালারাই করে যাচ্ছে।
একমাত্র ঈমানওয়ালারাই দাওয়াত- তালীম, তাবলীগ, তারবিয়্যাত-তাযকিয়া, ওয়াজ-নসীহত, দ্বীনী মোযাকারা, সাধ্য অনুযায়ী সীমিত আকারে ‘আমর বিল-মারূফ নাহি আনিল মুনকার’ এবং প্রয়োজনের মুহূর্তে সাধ্যমতো ‘জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ’র মাধ্যমে পৃথিবীতে ইনসানিয়াতের সবক প্রচারে যথাসাধ্য মশগুল রয়েছেন। এটা ভিন্ন কথা যে, ঈমানওয়ালাদের ঈমানী দুর্বলতা তাঁদের খেদমতগুলোকে মানে ও পরিমাণে যথেষ্ট সমৃদ্ধ করতে পারছে না। কিন্তু এ কথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বিশ্বের মুক্তি ও উন্নতি ঈমানদারদের ঈমানী তরক্কীর মধ্যেই নিহিত আছে এবং পৃথিবীর ক্ষতি ও অকল্যাণও হয়েছে ঈমানদারদের ঈমানী অবনতির কারণে। এই অবক্ষয়ের যুগেও ব্যাপক দাওয়াতের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য খেদমত আল্লাহ তা’আলা যে মহাপুরুষের মাধ্যমে আঞ্জামের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি হলেন, হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. (১৩০৩-১৩৬৩ হি.), এবং তার মেহনত ও মাকবুলিয়াতের ফসলই হলোঃ “দাওয়াত ওয়া তাবলীগ জামাত”। যদিও সবাই এই জামাতকে “দাওয়াত ওয়া তাবলীগের জামাত” বলে সম্বোধন করে থাকে, কিন্তু হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. বলতেন, “যদিও অনেকে এই জামাতকে “দাওয়াত ওয়া তাবলীগ জামাত” নামে সম্বোধন করে থাকে, কিন্তু আমি এই জামাতের এখনো কোন নামকরণ করি নাই। যদি আমি কোন নামকরণের মনস্থ করতাম তাহলে এই মেহনতের নাম দিতাম “তাহরীকে ঈমান” বা ঈমানী আন্দোলন।
হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. কুরআন ও হাদীসের অনেক বড় মুহাক্কিক আলেম ছিলেন। তিনি ছিলেন হিন্দুস্থানের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ দুই দ্বীনী শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলূম দেওবন্দ ও মাজাহিরুল উলূম সাহারানপুর মাদরাসার সন্তান। তিনি কিতাব ও সুন্নাহ গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছেন। সীরাতুন্নবী ও সাহাবা-জীবনী বিস্তৃতভাবে অধ্যয়নের পাশাপাশি তাঁদের জীবনের দাওয়াত অংশটি মনোযোগের সাথে পর্যবেক্ষণ করেছেন। পরবর্তী দাঈ-ইলাল্লাহদের যুগের দাওয়াতের ইতিহাসও পাঠ করেছেন। বড়দের সঙ্গে মশওয়ারা ও মতবিনিময় করেছেন। এরপর বর্তমান প্রচলিত কর্মপদ্ধতিটি প্রস্তুত করেছেন। কাজ আরম্ভ করে যতই অগ্রসর হয়েছেন ততই তাঁর অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কাজের মধ্যে মজবুতি এসেছে। তাঁর ব্যথিত হৃদয়ের আহাজারি ও আল্লাহর বান্দাদের প্রতি তাঁর দরদ আল্লাহ তা’আলা কবুল করে নিয়েছেন। ফলে তাঁর কাজ পুষ্পিত ও পল্লবিত হয়েছে এবং আজ পর্যন্ত লক্ষ-কোটি মানুষ এই মেহনতের মাধ্যমে সিরাতে মুস্তাকীমের সন্ধান পেয়ে চলেছে। এরপর যে ব্যক্তি যে পরিমাণ উসূলের পাবন্দী করেছেন এবং হক্কানী উলামা-মাশায়েখের সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত রেখেছেন তিনি তত বেশি উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছেন।
তাঁর এই মুবারক মেহনতের অন্যতম একটি মূল উদ্দেশ্য এই যে, বর্তমানে কালেমা পাঠকারী মুসলিমগণও দুনিয়ার মোহ ও বস্তুবাদিতার যে ব্যধিতে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়ে আছে, সে বিষয়ে তাদের মধ্যে অনুভূতি সৃষ্টি করা এবং তা থেকে মুক্তিলাভের প্রেরণা জাগ্রত করা। এটাই এ কাজের রূহ বা প্রাণ। আর এর কর্মপদ্ধতি এমন সুনিপুনভাবে বিন্যস্ত যে, আত্মসংশোধনের সাথে সাথে অনুভূতিহীন মানুষের মধ্যেও দ্বীনের প্রয়োজনীয়তার অনুভূতি জাগ্রত করার এক সুপ্ত মেহনত তার মননশীলতায় চলতে থাকে।
বর্তমানে বিশ্বব্যপী মুসলিম উম্মাহ সবচে’ বেশী যে বিষয়টির প্রয়োজন উপলব্ধি করছে, তা হলো সমগ্র মুসলিমশক্তির ঐক্য ও একতা। এ বিষয়ে হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. তার মালফূযাতের ১৬৫নং-এ উল্লেখ করেন, আমাদের এই আন্দোলনের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য হলো, মুসলমানের যাবতীয় জযবার উপর দ্বীনের জযবাকে জয়যুক্ত করা এবং এই পথে একই উদ্দেশ্য পয়দা করার পাশাপাশি ইকরামে মুসলিমের উসূলকে যিন্দা করে পুরো মুসলমি উম্মাহকে এই হাদীসের পরিপূর্ণ অর্থে পরিণত করা।
المسلمون كجسد واحد সমস্ত মুসলিম জাতি এক দেহের মত।
********************************************************
দাওয়াতি কাজের গুরুত্ব ও ফযীলত এত অধিক, যা কোনো মানুষ বাহ্যিক দৃষ্টিতে অনুধাবন করতে পারে না। পবিত্র কালামের অসংখ্য আয়াত যার উজ্জ্বল সাক্ষী। আল্লাহ তা’আলা বলেন “ঐ ব্যক্তির কথার চেয়ে ভালো কথা আর কার হতে পারে, যে আল্লাহর প্রতি আহবান করেছে, সৎ কাজ করেছে এবং বলেছে, আমি অনুগতদের একজন” (সূরা হামীম আসসাজদাহ : ৩৩)
আল্লামা শাববীর আহমদ উছমানী রাহ. এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন, এই আয়াতে ঐ সকল বিশেষ প্রিয়ভাজন বান্দার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যারা একক আল্লাহর প্রভুত্বে বিশ্বাস স্থাপন করে নিজেদের স্থিরতা ও দৃঢ়তার প্রমাণ দিয়েছে। এখানে তাদের অপর একটি উচ্চ মর্যাদার কথা আলোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ উত্তম ও উৎকৃষ্ট লোক সেই ব্যক্তি যে একমাত্র আল্লাহর জন্য নিজেকে নিবেদিত করে তাঁর আনুগত্য ও নির্দেশ পালনের ঘোষণা দেয়, তাঁর মনোনীত পথে চলে এবং দুনিয়াবাসীকে তাঁর দিকে আসার আহবান জানায়। তার কথা ও কাজ অন্যদেরকে আল্লাহর পথে আসার জন্য প্রভাবিত করে। লোকজনকে সে যে সকল ভালো কাজের দাওয়াত দেয় সে নিজেও সেগুলো আমল করে। আল্লাহর বন্দেগী ও আনুগত্যের ঘোষণা প্রদানে কোন সময়ে কোন স্থানে সামান্যতম সংকোচও বোধ করে না। তার জাতীয় পরিচিতি শুধু ইসলাম। সকল প্রকারের সংকীর্ণতা ও গোষ্ঠীপ্রীতি ত্যাগ করে নিজে খাঁটি মুসলমান হওয়ার ঘোষণা প্রদান করে এবং যার দাওয়াত দেওয়ার জন্য সাইয়েদুনা মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দণ্ডায়মান হয়েছিলেন এবং যার জন্য সাহাবায়ে কিরাম রা. নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
সূরা নাহলের ১২৫নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “ডাকো স্বীয় প্রতিপালকের পথে পরিপক্ক কথা বুঝিয়ে এবং উত্তমরূপে উপদেশ শুনিয়ে। আর তাদেরকে বিতর্কে নিরুত্তর করো উত্তম পন্থায়।”
এই আয়াতে খোদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তা’লীম দেওয়া হচ্ছে মানুষকে কিভাবে পথে আনতে হবে। এর তিনটি পন্থা বলা হয়েছে।
১) الحكمة,
২) الموعظة الحسنة,
৩) الجدال بالتي هي أحسن
الحكمة অর্থাৎ মযবূত দলিল-প্রমাণের আলোকে হিকমত ও প্রজ্ঞাজনোচিত ভঙ্গিতে অত্যন্ত পরিপক্ক ও অকাট্য বিষয়বস্তু পেশ করতে হবে, যা শুনে সমঝদার ও জ্ঞানবান রুচিসম্পন্ন লোক মাথা ঝুঁকিয়ে দিতে বাধ্য হয়। দুনিয়ার কাল্পনিক দর্শনাদি তার সামনে ম্লান হয়ে যায়। কোনো রকম জ্ঞান-বিজ্ঞান ও চিন্তা-চেতনার বিকাশ যেন ওহী-বর্ণিত তত্ত্ব ও তথ্যকে পরিবর্তন করতে না পারে।
الموعظة الحسنة -এর দ্বারা মনোজ্ঞ ও হৃদয়গ্রাহী উপদেশকে বোঝানো হয়েছে, যা কোমল চরিত্র ও দরদী আত্মার রস ও আবেগে থাকবে পরিপূর্ণ। নিষ্ঠা, সহমর্মিতা, দরদ ও মধুর চরিত্র দিয়ে সুন্দর ও ভারসাম্যপূর্ণ পন্থায় যে নসীহত করা হয় তাতে অনেক সময় পাষাণ-হৃদয়ও মোম হয়ে যায়, মৃত দেহে প্রাণ সঞ্চার হয় এবং একটি হতাশ ও ক্ষয়ে যাওয়া জাতি গা ঝাড়া দিয়ে জেগে ওঠে। মানুষ ভয়-ভীতি ও আশাব্যঞ্জক বক্তব্য শুনে লক্ষ্যস্থলের দিকে ছুটে চলে প্রবল বেগে, বিশেষত যারা অতটা সমঝদার, ধীমান ও উচ্চ মেধা-মস্তিষ্কের অধিকারী নয়, অথচ অন্তরে সত্য-সন্ধানের স্পৃহা প্রবল, তাদের হৃদয়ে মনোজ্ঞ ওয়ায-নসীহত দ্বারা এমন কর্ম-প্রেরণা সঞ্চার করা যায়, যা উঁচু জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা দ্বারাও অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না।
হ্যাঁ, দুনিয়ায় সব সময় একটা দল এমনও থাকে, যাদের কাজই হচ্ছে প্রতিটি বিষয়ে জটিলতা সৃষ্টি করা এবং কথায় কথায় হুজ্জতবাঁজি করা ও কূটতর্কে লিপ্ত হওয়া। এরা না হিকমতপূর্ণ কথা কবুল করে, না ওয়ায-নসীহতে কান দেয়। তারা চায় প্রতিটি বিষয়ে তর্ক-বিতর্কের ময়দান উত্তপ্ত থাকুক। অনেক সময় প্রকৃত বোদ্ধা, ন্যায়নিষ্ঠ ও সত্যানুসন্ধিৎসু স্তরের লোকদেরও সংশয়-সন্দেহ ঘিরে ধরে, আলোচনা-পর্যালোচনা ছাড়া তখন তাদেরও সন্তোষ লাভ হয় না। তাই الجدال بالتي هي أحسن এর বিধান রাখা হয়েছে-‘আর তাদেরকে বিতর্কে নিরুত্তর কর উত্তম পন্থায়।’
অর্থাৎ কখনো এমন অবস্থার সম্মুখীন হলে তখন উৎকৃষ্ট পন্থায় সৌজন্য ও শিষ্টাচার এবং সত্যানুরাগ ও ন্যায়-নিষ্ঠতার সাথে তর্ক-বিতর্ক করো। প্রতিপক্ষকে নিরুত্তর করতে চাইলে তা উত্তম পন্থায় করো। অহেতুক বেদনাদায়ক ও কলজে-জ্বালানো কথাবার্তা বলো না, যা দিয়ে সমস্যার কোনো সুরাহা হয় না; বরং তা আরও প্রলম্বিত হয়। উদ্দেশ্য হওয়া উচিত প্রতিপক্ষকে বুঝিয়ে সন্তুষ্ট করা ও সত্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। রুক্ষতা, দুর্ব্যবহার, বাক-চাতুর্য ও হঠকারিতা কখনো সুফল দেয় না। (তাফসীরে উছমানী ২/৬২৮-৬২৯)
অন্য জায়গায় আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন “মহাকালের শপথ! নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তারা নহে, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও সংযমের উপদেশ দেয়।’ (সূরা আসর)
এক কথায়, অনিবার্য বিপদ ও ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষের চারটি বৈশিষ্টার্জন অপরিহার্যঃ
১) আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনা এবং তাদের হিদায়াত ও প্রতিশ্রুতির প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা, চাই তা দুনিয়া সম্পর্কিত হোক, কিংবা আখিরাত সম্পর্কিত।
২) সেই ঈমান ও ইয়াকীনের প্রভাব কেবল মন-মানস পর্যন্ত সীমাবদ্ধ না রাখা; বরং সর্বাঙ্গে তা ফুটিয়ে তোলা এবং বাস্তব জীবনেও আন্তরিক বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটানো।
৩) কেবল নিজের ব্যক্তিগত সংস্কার ও কল্যাণ নিয়েই তুষ্ট না থাকা, বরং দেশ ও জাতির সামষ্টিক স্বার্থকেও সম্মুখে রাখা। দু’জন মুসলমান একত্র হলে নিজের কথা এবং কাজের দ্বারা একে অপরকে সত্য দ্বীন মেনে চলার এবং প্রতিটি কাজে সত্য ও সততা অবলম্বনের তাকীদ করা।
৪) প্রত্যেকে একে অপরকে এই নসীহত ও ওসীয়ত করা যে, সত্য ও ন্যায়ের ক্ষেত্রে এবং ব্যক্তিগত ও জাতীয় সংস্কার-সংশোধনের ক্ষেত্রে যত বাধা-বিপত্তি, যত অসুবিধা ও বিপদাপদ দেখা দিবে, এমনকি যদি মন-মানসের বিরোধী কাজও বরদাশত করতে হয় তাহলেও ধৈর্য্য ও সবরের সঙ্গে তা বরদাশত করতে হবে। পুণ্য ও কল্যাণের পথ থেকে পা যেন কখনো ফসকে না যায় এই ওসীয়ত করতে হবে। যে সৌভাগ্যবান ব্যক্তির মধ্যে এই চারটি গুণের সমাবেশ ঘটবে এবং যিনি নিজে পূর্ণাঙ্গ হয়ে অন্যদেরকে পূর্ণাঙ্গ করার চেষ্টা চালাবেন, কালের পৃষ্ঠায় তিনি অমর হয়ে থাকবেন। আর এমন ব্যক্তি যেসব নিদর্শন রেখে দুনিয়া থেকে বিদায় নেবেন তা ‘বাকিয়াতে সালেহাত’ তথা অবশিষ্ট নেক কাজ হিসেবে সর্বদা তার নেকীর খাতায় সংযোজিত হবে। বস্তুতঃ এই ছোট সূরাটি সমস্ত দ্বীন ও হিকমতের সার-সংক্ষেপ। ইমাম শাফেয়ী রাহ. যথার্থ বলেছেন যে, কুরআন মজীদে কেবল যদি এই সূরাটিই নাযিল করা হতো, তাহলে (সমঝদার) বান্দাদের হিদায়াতের জন্য যথেষ্ট ছিল। পূর্ববর্তী মনীষীদের মধ্যে দু’জন একত্র হলে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় তারা একে অপরকে সূরাটি পাঠ করে শুনাতেন। (তাফসীরে উছমানী ৪/৭৪৫)
আল্লাহ তা’আলা সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ প্রদানের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন “তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকতেই হবে, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দিবে ও অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখবে। আর তারাই সফলকাম। (সূরা আল ইমরান, আয়াতঃ ১০৪)
আল্লাহ তা’আলা আরো ইরশাদ করেন, “আর তুমি বুঝাতে থাক। কারণ বুঝানো ঈমানদারদের উপকারে আসে।” (সূরা যারিয়াতে, আয়াত : ৫৫)
এসব আয়াতের ফলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে এত বেশী নিমগ্ন ও ব্যস্ত হয়ে পড়েন, যেন তিনি জীবনের বিনিময়ে হলেও তাঁর উম্মতকে হিদায়াত করে ছাড়বেন। ফলে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, “যদি তারা (আপনার দাওয়াত) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আমিতো আপনাকে (দাওয়াত গ্রহণ করিয়ে জাহান্নাম থেকে) হেফাযতকারী হিসেবে পাঠাইনি। আপনার জিম্মাদারী হলো, শুধু তাবলীগ করা। (সূরা শুরা, আয়াতঃ ৪৮) অর্থাৎ দাওয়াত ও তাবলীগের দায়িত্ব আপনি পরিপূর্ণভাবে পালন করেছেন। এখন আপনার এত দুঃখিত ও অনুতপ্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। সত্য না মানার যা দোষ তা সত্যদ্রোহীদের উপরই বর্তাবে। তবে বুঝোনো আপনার দায়িত্ব। তাই দাওয়াত ও তাবলীগের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখুন। যার ভাগ্যে ঈমান আছে আপনার উপদেশে সে উপকৃত হবে, ঈমান আনবে এবং যারা ইতোপূর্বে ঈমান এনেছে তারা আরও বর্ধিত হারে উপকৃত হবে। আর অস্বীকারকারীদের জন্য আল্লাহর প্রমাণ পূর্ণ হবে। (তাফসীরে উছমানী ৪/৩২১)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “হে বস্ত্রাবৃত! উঠুন, সতর্কবাণী প্রচার করুন এবং আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন।’ (সূরা মুদ্দাসসির : ১-৩)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় উম্মতের জন্য এত বেশী ফিকির করতেন এবং উদ্বিগ্ন থাকতেন যে, আল্লাহ তা’আলা তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তারা যদি এ বিষয়ে বিশ্বাস না করে তবে তাদের পেছনে মনস্তাপ করতে করতে হয়ত আপনি প্রাণপাত করে ফেলবেন।” (সূরা কাহফ : ৬)
অর্থাৎ এই কাফিররা যদি কুরআনের কথা না মানে, তো আপনি তাদের দুঃখে মোটেই পেরেশান হবেন না। আপনি দাওয়াত ও তাবলীগের দায়িত্ব আদায় করেছেন ও করে যাচ্ছেন, কেউ না মানলে আপনার অতটা মর্মাহত ও চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। এই ভেবে অনুতাপ করাও সমীচীন নয় যে, আমি এমন মেহনত কেন করলাম যা সফল হল না? আপনি সর্বাবস্থায় সাফল্যমন্ডিত। দাওয়াত ও তাবলীগ এবং মানবতার প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতার যে কাজ আপনি করছেন তা আপনার মর্যাদা বৃদ্ধির সহায়ক। হতভাগার দল কবুল না করলে ক্ষতি তাদেরই। (তাফসীরে উছমানী ২/৭০১)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মত হওয়ার কারণে আমাদের উপরও দাওয়াতের কাজ জরুরি। যেমন সূরা ইউসুফে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “বলুন, এটিই আমার পথ। আল্লাহর দিকে আমি আহ্বান করি বুঝে-শুনে, আমি (করি) এবং যারা আমার সঙ্গে আছে (তারাও করে)। আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং আমি শরীক সাব্যস্তকারীদের অন্তর্ভুক্ত নই। (সূরা ইউসুফ, আয়াতঃ ১০৮)
অর্থাৎ এই খাঁটি তাওহীদের পথই আমার পথ। আমি বিশ্ব মানবতাকে আহবান করি যে, সমস্ত ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-চেতনা ছেড়ে এক আল্লাহর অভিমুখী হও এবং তাঁর তাওহীদ, তাঁর গুণাবলি ও বিধি-বিধান ইত্যাদির বিশুদ্ধ জ্ঞান বিশুদ্ধ পন্থায় অর্জন কর। আমি ও আমার সঙ্গীগণ অকাট্য দলিল-প্রমাণ এবং বিশুদ্ধ উপলব্ধি ও ব্যুৎপত্তির আলোকে এই সত্য সরল পথে প্রতিষ্ঠিত আছি। আল্লাহ তা’আলা আমাকে এক আলো দান করেছেন, যাতে সব সাথীর দেল-দেমাগ সমুজ্জ্বল হয়ে গেছে। কারও অন্ধ অনুকরণ নয়, বিশুদ্ধ তাওহীদের পথচারী প্রতিটি কদমে তার মন-মানসে আল্লাহর মারিফত ও অর্ন্তদৃষ্টির বিশেষ জ্যোতি ও পরম দাসত্বের স্বাদ উপলব্ধি করে অবচেতন মনে বলে ওঠে-‘আল্লাহ পবিত্র। আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।’ (তাফসীরে উছমানী ২/৪৫৯)
বিচিত্রময় এ বিশ্ব চরাচরের সৃষ্টবস্তু যেমন বৈচিত্রপূর্ণ, সৃষ্টি কৌশলও তেমন বিচিত্র, বৈচিত্রমণ্ডিত তেমন সৃষ্টিত্বত্তও। অবাক বিষ্ময়ে তাই সব নয়নই যেন আশ্চর্য বিষ্মিত! মহান মালিক, তিনি শুধু সৃজনেই স্রষ্টা নন; বিজনেও। এ মহা বৈকুণ্ঠের সেরা বৈচিত্রের মাঝে তাই জেগে ওঠে বিচিত্রময় প্রশ্নচর। এ জাগরণ প্রতিকুলতার নয়; প্রতিভার উদগীরণ। এ জাগরণ প্রতিহিংসার নয়; বুদ্ধির বিকিরণ। এটি জ্ঞান সাগরের চরোদ্ভাবন। প্রাকৃতিক এটি, তাই স্বাভাবিক! এ জাগরণ স্বাভাবিক হলেও বোধন সঠিক হওয়া বিধেয় নয় কি? এ পোস্টখানা সেই সঠিক বোধন-এরই যৌগিক উপকরণ, তাত্বিক ও তাথ্যিক বিবরণ, হাদীস ও কুরআন কেন্দ্রিক সংকলন। এতে প্রধাণতঃ দুটো বিষয় পাওয়া যাবে।
শক্তি ২ প্রকার।
১) মৌলিক শক্তি
২)শাখ্যিক বা বাহ্যিক শক্তি
মহান আল্লাহ তা’আলা মূল শক্তিকে নিজ হাতে রেখেছেন, আর শাখা শক্তিকে মানুষের হাতে দিয়েছেন। মানুষ এ শক্তি প্রয়োগ করে, তাই কর্ম সম্পন্ন হয়। এজন্য চর্মচক্ষুর স্থুলদর্শনে মনে হয় মানুষই কর্তা। কিন্তু মূলত, তিনিই সকল কাজের সুপ্ত সম্পাদক। নিজেকে আড়ালে রেখে সব কিছুই করে থাকেন, করে থাকেন নিয়ন্ত্রন ও পরিচালন। এ কথাটিই কবির ভাষায় বলা যায়ঃ
“সীমার মাঝে অসীম তুমি
বাজাও আপন সূর,
আমার মাঝে তোমার প্রকাশ
তাই এ্যাতো সুমধুর।”
একমাত্র অসীম শক্তিমান আল্লাহ ও তার কালাম পাক কুরআনই মৌলিক শক্তি। বাকী সমস্তই সৃষ্টবস্তুর সৃষ্টশক্তি। যা শাখাগত শক্তির অন্তর্ভূক্ত। যেমনঃ অর্থশক্তি, অস্ত্রশক্তি, জনশক্তি, রাষ্ট্রশক্তি, বৈদ্যুতিক শক্তি, বৈজ্ঞানিক শক্তি প্রভৃতি। শুধু মৌলিক শক্তির বিশ্বাসকেই খাঁটি ঈমান বলা হয়। এ ঈমানের সাথেই আল্লাহর মদদের সমস্ত ওয়াদা সম্পৃক্ত। আর শাখ্যিক শক্তির বিশ্বাসকে বলা হয় শিরক। এমন ঈমানদারের উপরই আল্লাহর আযাব-গযব আসে।
এই খাঁটি ঈমান অর্জনের জন্য ২টি কাজ করতে হয়ঃ
১) ঈমান গ্রহণ করতে হয়, তা জন্মগত হোক কিংবা অর্জনগত হোক।
২) ঈমানের চর্চা ও মেহনত করতে হয়।
ঈমানের চর্চা ৫ভাবে করা যায়।
১) হিজরত করা
২) আপ্রাণ সাধনা করা
৩) আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া
৪) আগুন্তক জামাতকে আশ্রয় দেওয়া
৫) আগুন্তক জামাতকে নুসরাত বা সহায়তা করা (সূরা আনফাল, আয়াতঃ ৭৪)
এ ৫ ভাবে ঈমানের চর্চা বা অনুশীলন করলে আল্লাহ পাক মুসলমানের ঈমানকে খাঁটি করে দিবেন। সমস্ত নবীগণই এ খাঁটি ঈমানের জন্যই তাবলীগ করতেন।
তাদের তাবলীগের মূল বৈশিষ্ট ছিলো ২টি।
১) বিনা বিনিময়ে দাওয়াত দেওয়া (সূরা ইউনুস, আয়াতঃ ৭২, সূরা হুদ, আয়াতঃ ২৯,৫১, সূরা শূরা, আয়াতঃ ২৩, সূরা শুআরা, আয়াতঃ ১০৯,১২৭,১৪৫,১৬৪,১৮০, সূরা সাবা, আয়াতঃ ৪৭)
২) আল্লাহমুখী দাওয়াত দেওয়া (সুরা আ’রাফ, আয়াতঃ ৬৫,৭৩,৮৫, সূরা হুদ, আয়াতঃ ৫০,৬১,৮৪, সূরা আম্বিয়া, আয়াতঃ ২৫, সূরা নামল, আয়াতঃ ৪৫, সূরা শুআরা, আয়াতঃ ২৩-৩০, সূরা আনকাবুত, আয়াতঃ ৩৬, সূরা মুদ্দাসসির, আয়াতঃ ১-৩)
এ দুটো বৈশিষ্ট যে দাওয়াত বা প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকবে সেই দাওয়াতই নবুয়াতী দাওয়াত হবে; অন্যথায়, দাওয়াতী কাজ হতে পারে কিন্তু নবুয়াতী কাজ হতে পারে না।
দাওয়াতী পদ্ধতির এ বিভিন্নতাও বিভিন্ন প্রশ্নের উৎস। বলাবাহুল্য, এই মহান ‘দাওয়াতী মিশন’ নিয়ে তামাম জাহানে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের মধ্যে বিভিন্ন কারণে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে, এসবের সমাধানের অন্বেষায় কুরআন-হাদীসের দলীল চেয়ে হন্যে হয়ে পড়েছিলাম বিজ্ঞ উলামা হযরাতগণের খেদমতে। শেষ পর্যন্ত আমার সেই আশা পূরণ হলো, সশরীরে দাওয়াতী কাজে যোগদানের মাধ্যমে। যখন দাওয়াতী আন্দোলনে সক্রীয় হওয়ার ফলে তা’লীম ও তাবলীগের অপূর্ব সমন্বয় ঘটলো তখন অজ্ঞতা ও প্রচ্ছন্নতার ঘোর অমানিশা কাটতে শুরু করে। পরবর্তীতে আরো মুতালা’আ ও তাহকীকের পর সেগুলো কাগজের বুকে আমানত রাখার ইচ্ছা করলাম, যা দীর্ঘকাল বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন চিরকুটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো। সেটিই আজ সাধারণ শিক্ষিত ভাইদের নিকট প্রকাশ করে (কারণ, উলামায়ে কেরামের নিকট আরো ‘দন্তোপড়ী’ জবাব রয়েছে) সাধ্যানুযায়ী ঈমানী দায়িত্ব পালনে ব্রত হলাম। কোন দল বা ব্যক্তি বিশেষের সমালোচনার উর্দ্ধে থেকে শুধু কুরআন ও হাদীসের আলোকে সমাধান দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে।
সম্মানিত পাঠকবর্গ একমাত্র জানা ও মানার নিয়তে এই সিরিজটি পড়ে থাকলে খাঁটি ঈমান গঠনে সহায়তা হবে ইনশা আল্লাহ।
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
********************************************************
বর্তমানে বিশ্বের ৭টি মহাদেশ-ই তাবলীগ জামাতের নূরানী পদধুলীতে নূরান্বিত, দীপ্ত পদভারে মুখরিত। তাবত বাতিল শক্তির অন্তর-মনিকোঠায় এমন দুঃসাহসী পদাঘাত ইতোপূর্বে খুব কম সংঘটনই আঁকতে পেরেছে। শুধু স্থলেই নয়, বরং ইদানিং পৃথিবীর দ্বীপে দ্বীপে শুরু হয়েছে তাদের পদচিহ্ন অঙ্কন। যেখানেই আল্লাহর বান্দা, সেখানেই দাঈ ইলাল্লাহ; এমন ব্যপক ও সুবিস্তৃত মেহনতের সাথে জুড়ে ধন্য হতে চান যুগশ্রেষ্ঠ উলামায়ে কেরামও। দেশ-বিদেশের সকল উলামায়ে রাসেখীন স্বীকৃতি দিয়েছেন, তবুও এ ব্যপারে বহু প্রশ্নের অবতারণা হয়ে থাকে বিভিন্ন কারণে। ইলমের অভাবই তার অন্যতম কারণ। এই পোস্টে তারই দলীল ভিত্তিক জবাব দেওয়া হয়েছে; যা সর্বশ্রেণীর, বিশেষতঃ তাবলীগে নব-আগুন্তুকগণের জানার ক্ষেত্রে বিশেষ উপকার হবে ইনশা আল্লাহ।
*********************************************************
প্রশ্নঃ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেরদেরকে দাওয়াত দিতেন আর তাবলীগী ভাইরা মুমিন-মুসলমানদের দাওয়াত দেয় কেন?
এটা বৈধ না বিদআত? নবীজী তো মুসলমানদের কাছে কখনো জামাত পাঠাননি।
উত্তরঃ মুসলমানগণকে দাওয়াত দেওয়া শুধু বৈধই নয়, বরং আল্লাহ তা’আলার আদেশও। এ আদেশ কুরআনে রয়েছে, হাদীসে রয়েছে, ইতিহাসেও রয়েছে, রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাস্তব জীবনের সার্বিক আমলনামায়। নেই শুধু আমাদের জানা।
আরবীতে একটি মূলনীতি আছে, عدم الوجدان لا يدل علي عدم الوجود অর্থাৎ, অজানা কখনো অনস্তিত্বের প্রমাণ বহন করে না। তাই উক্ত প্রশ্নের উত্তরে প্রমাণস্বরূপ ৩টি আয়াত, ৫টি হাদীস ও ৪টি ইতিহাস পেশ করা হচ্ছেঃ
কুরআন ভিত্তিক দলীলঃ
১) و ذكر فإن الذكري تنفع المؤمنين
অর্থাৎ, (ঈমানী কথা) আলোচনা করতে থাকো (অর্থাৎ দাওয়াত দিতে থাকো), কেননা নিশ্চয় ঈমানী আলোচনা (দাওয়াত ইলাল্লাহ) মুমিনদের উপকারে আসবে। (সূরা যারিয়াত, আয়াতঃ ৫৫)
২) يايها الذين آمنوا آمنوا بالله و رسوله
অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর ঈমান আনো। (সূরা নিসা, আয়াতঃ ৩৫)
এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ঈমানদারগণকেই সম্বোধন করে ঈমানের দাওয়াত দিয়েছেন ঈমানকে আরো তাঁজা ও সুসংহত করার উদ্দেশ্যে। কারণ, তিনি চান নির্ভেজাল, খাঁটি ও তাঁজা ঈমান। (তাফসীরে রুহুল বায়ান ও রূহুল মা’আনীর মত)
৩) قل لم تؤمنوا و لكن قولوا أسلمنا و لما يدخل الإيمان في قلوبكم، و إن تطيعوا الله و رسوله لا يلتكم من أعمالكم شيئا
মর্মার্থ, তোমরা ঈমানদার নও; কিন্তু মুসলমান। যদি তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য করো তবে তোমাদের বিন্দুমাত্র অমলও নষ্ট করা হবে না। (সূরা হুজুরাত, আয়াতঃ ১৪)
এখানেও আল্লাহ তা’আলা মসজিতে নববীতে নবীর পেছনে নামাজ সম্পাদনকারী গ্রাম্য মুসলমানগণকেই ঈমান ও আমলের দাওয়াত দিয়েছেন। দাওয়াত দেওয়ার আদেশও দিয়েছেন, আরো দিয়েছেন ক্ষমা। এ আয়াত থেকে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যামানায় ঈমানহীন মুসলমানও ছিলো।
নবীর যুগে ৫ শ্রেণীর মানুষ ছিলো, যারা আজও আছেঃ
১. খাঁটি মুসলমান
২. খাঁটি কাফের
৩. পাপী মুসলমান (ফাসেক)
৪. মুনাফিক মুসলমান (যারা মুসলমানদের সাথেই থাকতো)
৫. ঈমানহীন মুসলামন (যারা কোনমতে শুধু কালিমার বিশ্বাস নিয়ে পড়ে আছে, কিন্তু বিশ্বাস ও আস্থার পরিপূর্ণতা ও অবিচলতা নেই অথবা ঈমানবিধ্বংসী কাজে লিপ্ত, কিন্তু বংশীয় পরিচয়ে সে মুসলমান)
কে কোন দলের অন্তর্ভুক্ত তা আল্লাহই জানেন। হায় আল্লাহ! আমাদের সবাইকে ১ম শ্রেণীর মুসলমান হওয়ার তাউফীক দান করুন। আমীন।
হাদীস ভিত্তিক দলীলঃ
১) আবদে কায়সের মুসলিম-প্রতিনিধি দলকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াত দিয়ে তাদেরকেও দাওযাত দেওয়ার আদেশ দিয়ে বলেনঃ এ কথাগুলো মুখস্থ করে নাও এবং নিজের বংশধরদের কাছে পৌছে দেবে অর্থাৎ দাওয়াত দেবে। (ফাতহুল কাদীর, ইযালাতুল খাফা, সহীহ বুখারী, তাবলীগ জামাতের সমালোচনা ও তার সদুত্তরঃ শাইখুল হাদীস হযরত মাওলানা যাকারিয়া রাহ.)
উল্লেখ্য যে, হাদীসের উল্লেখিত “নিজের বংশধর”দের মধ্যে অনেকে মুসলমানও ছিলেন।
দেখুন বুখারী শরীফের হাদিসঃ
و عبد القيس علي أن يحفظوا الإيمان و العلم و يخبروا من وراءهم ـ رواه البخاري ـ
২) হযরত আযিম বিন উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হচ্ছেঃ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আযল ও ক্বাররা গোত্রের মুসলমানদের কাছে ৬ জনের একটা জামাত পাঠিয়েছেন।
সেই সৌভাগ্যবান ৬ জন হলেন,
১. হযরত মারছায রাদিয়াল্লাহু আনহু
২. আসিম রাদিয়াল্লাহু আনহু
৩. হাবীব রাদিয়াল্লাহু আনহু
৪. খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু
৫. যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু
৬. আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু।
الاستيعاب গ্রন্থের এবারত দেখুনঃ
قد بعث رسول الله صلي الله صلي الله عليه و سلم لـ”عضل و قارة مرثذ بن أبي مرثذ، عاصم بن ثابت، حبيب بن عدي، خالد بن الكبير، زيد بن دثنة، عبد الله بن طارق ليتفقهوا في الدين و يعلمهم القرآن و شرائع الإسلام – الاستيعاب ـ الجزء الثاني، رقم الصفحة :خمس و ثلاثمأة
৩) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মুআয রাযিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত আবু মূসা রাযিয়াল্লাহু আনহুকে ইয়ামানের মুমিনদের কাছেই পাঠিয়েছিলেন। (মুসলিম শরীফ, অধ্যায়ঃ সাহাবায়ে কেরামের জীবনী)
৪) عن جرير ابن عبد الله قال: بايعت رسول الله صلي الله عليه و سلم علي إقام الصلاة و إيتاء الزكاة و النصح لكل مسلم ـ حياة الصحابةـ
মর্মার্থ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ৩টি কাজ করার জন্য শপথ পড়িয়েছেন। ১.নামাজ কায়েম করা, ২.যাকাত আদায় করা, ৩.দুনিয়ার সমস্ত মুসলমিদের কাছে তাবলীগ করা। (মুসলিম শরীফ, অধ্যায়ঃ সাহাবায়ে কেরামের জীবনী। আলকাউসার অভিধানের ৫৭৩ পৃষ্ঠায় বলা আছে, النصح শব্দ যখন আল্লাহ তা’আলার ক্ষেত্রে পযোজ্য হয় তখন তার অর্থ দাড়ায় “খাঁটি হওয়া”, আর বান্দার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলে অর্থ হয় “উপকার করা, তাবলীগ করা, উপদেশ দেওয়া, ইত্যাদি)
৫) عن قيس سمعت جريرا يقول بايعت رسول الله صلي الله عليه و سلم علي شهادة أن لا إله إلا الله و أن محمدا رسول الله و إقام الصلاة و إيتاء الزكاة و السمع و الطاعة و النصح لكل مسلم ـ الصفحة التاسعة الثمانون و مأتين ـ
অর্থাৎ, হযরত কায়েস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি হযরত জারীর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনেছি যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট কয়েকটি বিষয়ে শপথ পড়েছি। ১. কালিমায়ে তাইয়িবার সাক্ষ্যপ্রদান
২. নামাজ কায়েম করা
৩. যাকাত আদায় করা
৪. (আল্লাহ ও তার রাসূলের আদেশসমূহ) মনযোগ সহকারে শোনা
৫. (আল্লাহ ও তার রাসূলের) নিঃসর্ত আনুগত্য করা
৬. সমস্ত মুসলমানের নিকট তাবলীগ করা। (হায়াতুস সাহাবাহ, বুখারী শরীফ, পৃষ্ঠাঃ ২৮৯)
উপরোক্ত ১নং আয়াতে “মুমিনগণ” ও উক্ত হাদীসদ্বয়ে “মুসলিমগণ” শব্দ ব্যবহার করে মুমিন-মুসলিমদেরকে বিশেষভাবে দ্বীন বুঝিয়ে দাওয়াত দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। (রূহুল বায়ান ও রূহুল মা’আনী ও বিভিন্ন তাফসীরের মত)
এছাড়াও আরো এতদসংক্রান্ত আরো হাদীস পাবেন নাসায়ী শরীফের ২য় খণ্ডের ১৬১-১৬৩ পৃষ্ঠায় ও মুসলিম শরীফের ২য় খণ্ডের ১৩০-১৩১ পৃষ্ঠায়। দেখে নেওয়ার জন্য অনুরোধ থাকলো।
ইতিহাস ভিত্তিক দলীলঃ
১) স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাররা, সিরিয়া ও ইয়েমেন প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় এবং আমল; আবদে কায়স ও বনু হারিস গোত্রের মুমিন-মুসলমানদের কাছেই তাবলীগ ও তালিমের জন্যেই অনেক জামাত পাঠিয়েছিলেন। (বুখারী শরীফ, অধ্যায়ঃ باب تحريض النبي صلي الله عليه و سلم অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উৎসাহদান, ইবনে খালদূন, পৃষ্ঠাঃ ৮১৮, ইবনে সা’দ রচিত “তাবাকাত”, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ১৩৭, তাফসীরে তাবারী, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ৯৪, উসদুল গাবাহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ৩৭৬-৩৭৮)
২) ফাতহুল কাদীর ঘোষণা দিচ্ছেঃ সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম তাবলীগের উদ্দেশ্য একুফা ও কারকীসিয়া সফর করেছেন। হযরত উমর, হযরত সাকিল বিন ইয়াসার ও হযরত আবদুল্লাহ বিন মুগাফফাল রাদিয়াল্লাহু আনহুম প্রমুখের এক জামাত সিরিয়া প্রেরিত হয়েঠছিল। এসব জামাত মুসলমানদের উদ্দেশ্যেই প্রেরিত হয়েছিলো। (ফাতহুল কাদীর, ইযালাতুল খাফা, হায়াতুস সাহাবাহ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ১৪৩-১৪৫)
৩) কায়স ইবনে আসিম রা. এর আমীরত্বে তামীমের বিভিন্ন মুসলিম গোত্রেই তাবলীগের উদ্দেশ্য ৯ম হিজরী/৬৩১খৃষ্টাব্দ ১২ জনের এক জামাত বের হয়েছিলো। (আল ইস্তী’আব, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ৩০৫)
৪) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবদুল্লাহ বিন তারিকের নেতৃত্বে আযল ও ক্বাররা গোত্রের মুসলমানদের কাছেই ৬২৫ খৃষ্টাব্দে ৬ জনের এক জামাত পাঠান।
সেই সৌভাগ্যবান ৬ জন হলেন,
১. হযরত মারছায রাদিয়াল্লাহু আনহু
২. আসিম রাদিয়াল্লাহু আনহু
৩. হাবীব রাদিয়াল্লাহু আনহু
৪. খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু
৫. যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু
৬. আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু।
الاستيعاب গ্রন্থের এবারত দেখুনঃ
قد بعث رسول الله صلي الله صلي الله عليه و سلم لـ”عضل و قارة مرثذ بن أبي مرثذ، عاصم بن ثابت، حبيب بن عدي، خالد بن الكبير، زيد بن دثنة، عبد الله بن طارق ليتفقهوا في الدين و يعلمهم القرآن و شرائع الإسلام – الاستيعاب ـ الجزء الثاني، رقم الصفحة :خمس و ثلاثمأة
শেষ কথাঃ উক্ত আয়াত, হাদীস, ইতিহাস ও নবীর বাস্তব জীবনের কর্মপন্থা এবং মুসলমানদের ঈমানী অবস্থা তাদের দাওয়াতের দলীলভিত্তিক সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করছে। অতএব, এটি পরিস্কার যে, মুসলমানদেরকে দাওয়াত না দেওয়া সুস্পষ্ট কুরআন-সুন্নাহ বিরুধী জঘন্য অপরাধ ও ইসলামের অমোঘ বিধান রহিত করণের নামান্তর। নাউযু বিল্লাহ।

******প্রশ্নঃ চিল্লা কোথায় পেলেন? এটির শরয়ী অবস্থান কী?******

উত্তরঃ এ সবই কুরআন ও হাদীসের নস থেকে নেওয়া। কোনটিই নবোদ্ভাবিত কিছু নয়। শরীয়তের সুস্পষ্ট ও সুক্ষ্ম দলীল দ্বারা এসব সুস্পষ্ট প্রমাণিত।
তবে, শরয়ী দলীল জানার আগে দলীল নিষ্কর্ষণের উপায় বা সূত্র জানা অপরিহার্য। কেননা, সূত্র-জ্ঞানের অভাবও অনেক ক্ষেত্রে এসব প্রশ্নের উদ্ভাবক।
তাই বলছি, কুরআন থেকে দলীল বা প্রমাণ উদ্ভাবনের মূলসূত্র ৪টিঃ
১) কুরআনী শব্দ বা বাক্যের আভিধানিক অর্থ।
২) কুরআনী শব্দের ব্যবহারের ভিন্নতা।
৩) কুরআনী শব্দের সুপ্ত আবেদন বা নির্দেশনা।
৪) কুরআনী শব্দের উদ্দেশ্য। (নূরুল আনওয়ার, পৃষ্ঠাঃ ১৩)
উক্ত নিয়ামনুসারে কুরআন ভিত্তিক চিল্লার দলীলঃ
১) و إذ واعدنا موسي أربعين ليلة
যখন আমি মূসা আলাইহিস সালামকে ৪০রজনীর প্রতিশ্রুতি দিলাম (সূরা বাকারাহ, আয়াতঃ ৫১)
২) و وعدنا موسي ثلثين ليلة و أتممناها بعشر فتم ميقات ربه أربعين ليلة
অর্থঃ আর আমি মূসা আলাইহিস সালামকে ৩০রাতের ওয়াদা দিয়েছি, আর তা পূর্ণ করেছি আরো ১০বাড়িয়ে, ফলে তার মেয়াদ পূর্ণ হলো ৪০রজনীতে। (সূরা আ’রাফ, আয়াতঃ ১৪২)
উক্ত আয়াতে চিল্লার (৪০ দিন) শেষে ঘর ছেড়ে তূর পাহাড়ে হিজরতের মাধ্যমে তাওরাত দিয়েছেন। সুতরাং, চিল্লার শিক্ষক ও উদ্ভাবক স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা নন কি?
***********************************************************************************
হাদীস ভিত্তিক চিল্লার প্রমাণঃ
১) عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلي الله عليه و سلم : من صلي لله أربعين يوما في جماعة يدرك التكبيرة الأولي كتبت له برائتان: براءة من النار، و براءة من النفاق. (رواه الترمذي، باب ما جاء في فصل التكبيرة الأولي، رقم 241 قال الحافظ المنذري: رواه الترمذي و قال: لا أعلم أحدا رفعه إلا ما روي مسلم بن قتيبة عن طعمة عن عمرو قال المعلي رحمه الله: و مسلم و طعمة و بقية رواته ثقات، الترغيب 1/263)ـ
অর্থঃ হযরত আনাস ইবেন মালেক রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ৪০দিন তাকবীরে উলার সঙ্গে জামাতে নামায পড়ে সে দু’টি পরোয়ানা লাভ করবে।
ক) জাহান্নাম থেকে মুক্তির পরোয়ানা
খ) মুনাফেকী থেকে মুক্তির পরোয়ানা (তিরমিযী শরীফ)
২)عن عبد الله قال حدثنا رسول الله صلى الله عليه وسلم، وهو الصادق المصدوق، قال: إن أحدكم يجمع في بطن أمه أربعين يوماً، ثم علقة مثل ذلك، ثم يكون مضغة مثل ذلك، ثم يبعث الله ملكاً فيؤمر بأربعة: برزقه وأجله، وشقي أو سعيد، فوالله إن أحدكم – أو: الرجل – يعمل بعمل أهل النار، حتى ما يكون بينه وبينها غير باع أو ذراع، فيسبق عليه الكتاب فيعمل بعمل أهل الجنة فيدخلها، وإن الرجل ليعمل بعمل أهل الجنة، حتى ما يكون بينه وبينها غير ذراع أو ذراعين، فيسبق عليه الكتاب، فيعمل بعمل أهل النار فيدخلها (رواه البخاري، كتاب القدرـ رقم الحديث 1226/6221)ـ
উক্ত হাদীসে মায়ের উদরে প্রতি চিল্লায় শিশুর শারীরিক পরিবর্তনের কথা বর্ণিত হয়েছে। মায়ের পেটে যেমন ৩চিল্লা অবস্থানের পর শিশু প্রাণ পায় তেমন চিল্লার পেটে মানবজীবন ঈমানীপ্রাণ পায়।
৩)عن أبي هريرة قال: رباط يوم في سبيل الله أحب إلي من أن أوافق ليلة القدر في أحد المسجدين، مسجد الحرام، ومسجد رسول الله صلى الله عليه وسلم، ومن رابط ثلاثة أيام في سبيل الله فقد رابط، ومن رابط أربعين يوما فقد استكمل الرباط. (مصنف عبد الرزاق، الجزء الثاني و العشرون في باب ما جاء في فضل الرباط)ـ
৪)عن ابن عمر رضي الله عنهما : أنه قدم على عمر من الرباط ، فقال : كم رابطت ؟ قال : ثلاثين يوما ، فقال عمر : عزمت عليك ألا رجعت حتى تتمها أربعين يوما .
৫) عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: “تمام الرباط أربعون يوما”. وفيه أيضا حدثنا عيسى بن يونس عن معاوية بن يحيى الصدفي عن يحيى بن الحرث الرماني عن مكحول قال: “قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تمام الرباط أربعون يوما. (في مصنف ابن أبي شيبة جزء 45)ـ
৬)عن يزيد بن أبي حبيب يقول: “جاء رجل من الأنصار إلى عمر بن الخطاب فقال أين كنت؟ قال في الرباط، قال كم رابطت؟ قال ثلاثين، قال فهلا أتممت أربعين. (في مصنف عبد الرزاق)ـ
৭) عن أبي أمامة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: “تمام الرباط أربعين يوما، ومن رابط أربعين يوما لم يبع ولم يشتر ولم يحدث حدثا خرج من ذنوبه كيوم ولدته أمه. (معجم الكبير جزء 20 )ـ
উক্ত হাদীস ৫টিতে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ আছে, আল্লাহর রাস্তার ন্যুনতম পূর্ণ মেয়াদ ৪০ দিন।
নিম্নের আরবী থেকে বিস্তারিত জেনে নিন।
الرباط في سبيل الله ومجالاته المعاصرة “
عرض وتلخيص: د. عماد سعيد لبد
تنويه.
يأتي هذا العمل المتواضع ضمن زاوية ( قرأت لك )، وهي زاوية دورية ( شهرية مؤقتاً ) تعدها وتشرف عليها الإدارة العامة للتخطيط و التطوير لدى الشرطة الفلسطينية، الهدف منها إطلاع وإثراء القراء على أهم الأعمال المختارة المتعلقة بالعمل الشرطي.
وهذا العمل مقتبس عن بحث للدكتور / محمد جميل ديب المصطفى الأستاذ المشارك في كلية الشريعة وأصول الدين في جامعة الملك خالد بابها والمنشور بعنوان ” الرباط في سبيل الله ومجالاته المعاصرة ” في مجلة البحوث الأمنية الصادرة عن جامعة نايف للعلوم الأمنية العدد (40) شعبان 1429هــــ.
” الرباط في سبيل الله ومجالاته المعاصرة “
تقديم.
قال تعالي : ” يأيها الذين آمنوا اصبروا و صابروا ورابطوا وإتقوا الله لعلكم تفلحون ” .
( أل عمران: 200 )
يعتقد الكثير من المفكرين أن ما كتب في الفقه عن الرباط ومجالاته المعاصرة غير كاف لتحديد معني الرباط وحقيقته، ومشمولاته، فالناس يدرسون أحكام الرباط كما تدرس أحكام الرق أي معرفة حكم تاريخي لم يعد له مجال في التطبيق في واقع الناس.
ويعود ذلك لسبب ظن الكثير أن الثغور التي تشكل خطراً، هي الحدود البرية والبحرية فقط، ولم يعلموا أن هناك ثغوراً أخري، لا تقل خطراً عن الحدود الجغرافية، حيث أصبحت للعدو منافذ كثيرة، فقد أصبح بإمكان العدو أن يأتينا عن طريق الأفكار الهدامة، والدماء الملوثة، والهواء الملوث، والمخدرات… الخ. فالرباط هو كل عمل يلازمه المسلم، بنية الحفاظ علي مصالح المسلمين ابتغاء مرضاة الله عز وجل.
وفي هذا العمل المتواضع سيتم تسليط الضوء على الرباط كأحد لوازم الجهاد، وأحد أسباب الحفاظ علي مصالح الأمة ومكتسباتها، باعتبار أن الرباط يجب أن يشمل كافة الثغور الجوية والفكرية والصحية والأمنية والإعلامية وما شابه ذلك، أو أي ثغر فيه خطر عي المسلمين، أو لرد خطر متوقع عنهم.
والهدف من هذا العمل المتواضع هو المساهمة في الحفاظ علي مصالح المسلمين ومكتسباتهم في الحاضر والمستقبل. وإعطاء دفع روحي، لتفعيل العلم الدنيوي، و جعل كل المسمين ينهضون بمسؤولية الحفاظ علي مصالح الأمة.
و نسأل الله تعالي، أن يجعل هذا العمل نقطة مضيئة في طريق المسلمين، وشاحذاً لهممهم للمرابطة في كل ثغر يشكل خطراً عليهم، ونسأله سبحانه أن يأجرنا عليه يوم الدين، وصلي الله علي محمد وعلي أله وصحبه أجمعين.
أولاً: تعريف الرباط و حكمه.
تعريف الرباط.
يعرف الرباط بأنه ملازمة ثغر فيه خطر على المسلمين؛ لرد خطر متوقع عنهم. و يعرف أيضاً أنه ملازمة شيء من أجل الحفاظ عليه والقيام بتدبيره من غير إخلال, مع الاستعداد الدائم والترقب.
و الرباط يحتاج إلى صبر وانتظار في المكان والى مجاهدة النفس, قال صلى الله عليه وسلم: ” وانتظار الصلاة بعد الصلاة فذلكم الرباط “.
وعليه يمكن القول: ” إن الرباط يشمل كل عمل صالح ينوي به الإنسان طاعة الله عز وجل”.
حكم الرباط.
الرباط من توابع الجهاد، واختلف العلماء في حكم قتال الكفار وجهادهم إلى قولين وهما:-
القول الأول: هو فرض كفاية إذا قام به البعض الكافي سقط عن الباقين, واستدلوا على ذلك بقوله تعالى: ( وقاتلوا في سبيل الله الذين يقاتلونكم ولا تعتدوا إن الله لا يحب المعتدين ). وقوله تعالى ) :وان نكثوا أيمانهم من بعد عهدهم وطعنوا في دينكم فقاتلوا أئمة الكفر إنهم لا أيمان لهم لعلهم ينتهون).
واستدل الجمهور على أن القتال فرض كفاية, وليس بفرض عين, بقوله تعالي: ( وما كان المؤمنون لينفروا كافة فلولا نفر من كل فرقة منهم طائفة ليتفقهوا في الدين ولينذروا قومهم إذا رجعوا إليهم لعلهم يحذرون ) ( التوبة:122)
ومكان الاستدلال أن الآية لم توجب الخروج على الجميع, بل إن رسول الله ( صلى اله عيه وسلم ) كان يبعث بعض السرايا ويقيم هو وسائر أصحابه.
القول الثاني: قال سعيد بن المسيب: الجهاد فرض عين واستدل على ذلك بما بقوله تعالى: ( انفروا خفافا وثقالا وجاهدوا بأموالكم وأنفسكم في سبيل الله ذلكم خير لكم إن كنتم تعلمون ).
وظاهر هذه الآيات أن الجهاد فرض عين؛ لأنه لم يستثن أحدا من الرجال لا شيخا, ولا فقيرا, ولا غنيا. وقوله صلى الله عليه وسلم: ” من مات ولم يغز ولم يحدث نفسه بالغزو مات على شعبة من شعب النفاق “.
مناقشة حكم الرباط.
-              رد الجمهور على استدلال سعيد بن المسيب بالآيات، أن الآيات التي استدل بها منسوخ حكمها. ولو كان الجهاد فرض عين لذكره الرسول صلى الله عليه وسلم في الحديث الذي بين فيه فرائض الإسلام العينية.
-              ورد القائلين بأن الجهاد إليه وليس فرض بأن هناك أدلة نصت علي إلزام المؤمنين القتال كقوله تعالي: ( كتب عليكم القتال وهو كره لكم ) ( البقرة : 216) لأن الفرض معناه الإلزام.
-              ما نقل عن ابن عمر وعطاء وغيرهما، من عدم الوجوب، علي أنهم قصدوا عدم الوجوب العيني، قال ابن جريج: قال العطاء بن أبي رباح : أواجب الغزو علي الناس في هذه الآية ؟ قال: لا، إنما كتب علي أولئك، أي أصحاب محمد صلي الله عليه وسلم خاصة، حيث كان قتالهم معه فرض عين عليهم.
الترجيح.
الناظر في أدلة الأقوال السابقة، يري رجحان القول الأول بأن الجهاد فرض كفاية، إذا قام به البعض سقط الوجوب عن الباقين وذلك لما يلي:
-              قوة أدلة الجمهور في القول الأول.
-              إيجاب الجهاد عينياً يقتضي خروج المسمين كلهم دفعة واحدة، وهذا لم يفعله النبي صلي الله عليه وسلم ولا أصحابه.
-              خروج كل المسلمين في كل غزوة، يتسبب في ضياع مصالح دنيوية كالتعليم والزراعة والتجارة وإمداد المجاهدين بالمؤن والسلاح، و ذلك لقوله تعالي: ” وما كان المؤمنون لينفروا كافة ” ( التوبة:122 ) أي لا يصح لهم ذلك.
-              قال الشافعي رحمه الله: ” الغزو غزوان: نافلة وفريضة، فأما الفريضة فالنفير إذا هاجم العدو بلد الإسلام، والنافلة الرباط، والخروج إلي الثغور “.
و الراجح هو رأي الجمهور في القول الأول، أي أن الجهاد فرض كفاية. وعليه فان الرباط فرض كفاية، إذا قام به البعض الكافي سقط الإثم عن الباقين، وإلا أثم الجميع.
ثانياً : الرباط … فوائده … فضله … مكانه … مدته.
فوائد الرباط.
-              الحفاظ عي أرض المسلمين ودمائهم وحرماتهم.
-              إشعار العدو بأنك في حالة استعداد لكل طارئ، وأنك غير غافل عنه.
-              فيه غناء عن استعمال القوة، لأن استعراض القوة قد يغني عن استعمالها، فإن ذلك قد يكون رادعا للعدو.
-              تحقيق الأمن والاستقرار للمواطنين، عندما يشعرون بأن هناك من يقوم بحمايتهم.
فضل الرباط.
-              للرباط فضل، لما من دفاع عن حرمات المسمين، وقد جاء في فضل الرباط أخبار منها:
-              قول رسول اله صلي الله عليه وسلم: ” رباط ليلة في سبيل اله خير من صيام شهر وقيامه، فإن مات جري عليه عمله الذي كان يعمله، وأجري عليه رزقه، وأمن من فتان القبر ” .
-              قال رسول الله صلي الله عليه وسلم ” كل ميت يختم علي عمله، إلا المرابط في سبيل الله، فإنه ينمو له عمله إلي يوم القيامة، ويؤمن من فتان القبر”.
-              أن عثمان بن عفان رضي الله عنه قال علي المنبر: سمعت رسول الله صلي الله عليه وسلم يقول: ” رباط يوم في سبيل الله خير من ألف يوم فيما سواه من المنازل”.
-              ما رواه أبو ريحانة مولي النبي صلي الله عليه وسلم، قال صلي الله عليه وسلم: ” حرمت النار علي عين بكت من خشية الله وحرمت النار علي عين سهرت في سبيل الله “.
مكان الرباط.
يوجد في مكان الرباط أكثر من قول وهي:
-              لا يستلزم أن يكون الرباط علي الحدود فقط بل الأمر المهم من مصالح المسلمين، سواء كان حراسة أو غيرها.
-              الرباط كان في السابق مختصاً بالإقامة علي حدود أرض الإسلام، لكن لإنطباق الولاية ( السيادة ) علي المياه الإقليمية وعلي المجال الجوي فهذا يدلل علي أن الثغور ليست مختصة بالبر، ولا بساحل البحر، مما يعني أن مكان الرباط يشمل الثغور البرية و المياه الإقليمية، والمجال الجوي للدولة.
-              الرباط يكون علي الحدود فقط، لمن هم على الحدود، مثل العاملين على الرادارات وفي المطارات، فالرباط إذن يكون في كل ثغر يتوقع فيه خطر من العدو.
-              ومن هنا يمكن القول: ” ليس من الضروري أن يكون الرباط علي الحدود البرية، ولا بربط الخيل فيها، بل يكون الرباط في المكان الذي يراه المسلم، مناسباً لكشف الخطر ومقابلته، سواء كان علي صهوة جواد، أو علي رادار، أو في مختبر أبحاث علمية، أو كشف الأشخاص المصابين بالأمراض المعدية مثل (الايدز) أو علي منافذ البلاد الجغرافية لكشف مهربي المخدرات والخمور.
مدة الرباط.
ليس للرباط مدة محددة، فكل مدة أقامها الشخص بنية الرباط، فهو رباط، قلت، أو كثرت، وذلك للاتي:
-              النبي صلي الله عليه وسلم لم يحدد مدة للرباط.
-              روي عن أبي هريرة رضي الله عنه أنه قال:” رباط يوم في سبيل الله أحب إلي من أن أوافق ليلة القدر في أحد المسجدين مسجد الحرام أو مسجد رسول الله صلي الله عليه وسلم، ومن رابط ثلاثة أيام في سبيل الله فقط، ومن رابط أربعين يوماً فقد استكمل الرباط.
ثالثاً : الرباط و مجالاته المعاصرة.
-              إن تشريع الجهاد كان لحفظ هيبة المسلمين ومصالحهم، والرباط في الثغور كذلك، وقد سبق أن ذكر العلماء: أن كل مكان أغار العدو عليه ذات مرة فإنه يصبح مكاناً للرباط، وقد أصبحنا نري ثغوراً كثيرة بدأ الأعداء يهاجموننا منها، وأهم الثغور المفتوحة اليوم:-
-              الحدود البرية و البحرية والجوية، أو الثغور الجغرافية.
المرابطة في هذه الثغور تكون عبادة عظيمة يؤجر الإنسان عليها إذا أحسن النية، والمرابطة فيها تحتاج الي الإعداد العسكري الكامل على مستوى الأفراد والمعدات والخطط والتدريبات، وبما يتوافق مع درجة خطورة الأعداء وتهديدهم لمصالح المسلمين.
-              الثغور الفكرية.
إن أخطر الثغور المفتوحة اليوم، هي تلك التي تهدد عقيدة المسلمين وإيمانهم، بواسطة موجات الإلحاد والشبهات التي يثيرها أعداء الإسلام حول: وجود الله، ووحدانيته، وحول الثوابت الإسلامية، وهذا يقتضي بناء العقيدة بناءً صحيحاً حتى يكون لدي المسلم مناعة فكرية تقابل شبهات الباطل، وتكون لها بالمرصاد.
يقول الشيخ محمد متولي الشعراوي رحمة الله عليه: ” إن الرباط لا يكون فقط بالخيل للعدو المهاجم هجوماً مادياً، بل المرابطة تعني الإعداد لكل ما يمكن أن يرد عن الحق صيحة الباطل، مثل الهجوم علي شخصية الرسول صلي الله عليه وسلم: ” إن التهجم علي شخص الرسول صلي الله عليه وسلم ثغر خطير و فتح جديداً علي المسلمين، من أجل تشويه شخصية الرسول القدوة، الذي يتأسون به، وهناك بؤر الاستشراف كلها ثغور تحتاج إلي مرابطة، وهناك مؤتمرات تعقد للكيد للإسلام وأهله، كل ذالك ثغور تحتاج إلي من يرابط فيها، ورصد تحركاتهم ضد الإسلام وأهله، حتى يكشف زيفها أو يواجهها بما يتناسب معها “.
-              الثغور الصحية.
قال صلي اله عليه وسلم: ” لا يورد مريض علي مصح “. و قال صلي اله عيه وسلم: ” إذا سمعتم بالطاعون بأرض فلا تدخلوها، وإذا وقع بأرض قوم فلا تخرجوا منها “.
لكن اليوم بدأت بعض الأمراض تصنع جراثيمها في المختبرات، وأصبحت وسيلة هجومية تستخدم ضد العدو، وأصبح بإمكان العدو، نشر جراثيم أمراض معدية في منطقة ما، بواسطة الدماء بالأمراض القاتلة، كمرض فقدان المناعة، ( الايدز) و( السرطان) وغيرها من الأمراض، بل أصبح يفسد الهواء بالغازات السامة، أفلا يحتاج ذلك إلي رباط علي الحدود و منع دخول المصابين به، وإلي رباط في المختبرات لمنع دخول الدماء والأدوات الملوثة بذلك الجرثوم أو غيره .
-              الثغور الأمنية.
إن نعمة الأمن واحدة من أهم نعم ثلاثة بعد الإيمان، لقوله النبي صلي الله عليه وسلم ” من أصبح منكم آمناً في سربه معافى في جسده، عنده قوت يومه، فكأنما حيزت له الدنيا “. فمن بات أمناً في مجتمعه يكون قد تحقق له ثلث السعادة التي يبحث عنها الناس. والأمن المطلوب يشمل أنواعاً كثيرة، أهمها: الأمن علي النفس، ثم الأمن علي العرض، ثم الأمن علي المال، والدولة هي التي يناط بها تحقيق الأمن في هذه الجوانب.
لقد كان عمر بن الخطاب عيناً ساهرة علي حرمات المسلمين وأموالهم؛ فمسؤولية القائمين علي الأمن كبيرة، يسهرون حيث ينام الناس، ليرتاح الناس، يضحون براحتهم من أجل المجتمع، إنهم شموع تحترق، ليسعد الآخرون، ولا شك في أن يكون عملهم رباطاً، إذا أحسنوا النية.
واعتبار العمل في حفظ أمن المسلمين رباطاً في سبيل الله، فيه فائدتان: الأولي: حصول العامل في حفظ الأمن علي الأجر الذي وعد به المرابط في الآخرة. و الثانية: أن رجل الأمن عندما يعتبر عمله رباطاً وجهاداً يؤجر عليه، فإنه سيتقن عمه ويتفاني فيه، إرضاء الله تعالي، وابتغاء مرضاته.
-              الثغور الإعلامية.
إن الإعلام والفضائيات ثغر خطير يتسلل منه الفساد والانحراف الفكري والعقائدي والسلوكي، ولا بد من مواجهة هذا الطغيان الجارف للخير وللأخلاق، وللدين، وإنه لثغر خطير لم يعد ينفع معه إغلاق الأبواب، ولا النوافذ ولا العقول ولا العيون، ولا بد من مرابطة في مواجهة هذا الفساد، ومواجهة هذا الفساد تحتاج إلي أمور:-
-              الرباط لمراقبة القنوات الفضائية لمنع الفاسد والمفسد منها، من الدخول إلينا قدر استطاعتنا.
-              إيجاد البدائل النظيفة، مما يستدعي استنفار كتابنا وشعرائنا وإعلاميينا، للكتابة عن أخلاق الإسلام العظيمة، ومبادئه السامية، وصياغتها قصصاً وثمثيليات هادفة بقوالب عصرية مشوقة، حتى تكون بديلا عن الباطل الذي غزانا.
-              لقد كان حسان بن ثابت رضي الله عنه، شاعراً مرابطاً للدفاع شعراً عن رسول الله وعن قضايا الإسلام، وقال صلي الله عليه وسلم لحسان ” لا يزال روح القدس يؤيدك ما نافحت عن الله ورسوله”. و قال: ” اهج قريشاً، فإنه أشد عليهم من وقع النبل”.
-              ثغور البحث العلمي.
طلب الله تعالي إعداد القوة ورباط الخيل لمواجهة أعدائنا، حيث قال في محكم تنزيله : ” وأعدوا لهم ما استطعتم من قوة ومن رباط الخيل ترهبون به عدو الله وعدوكم وآخرين من دونهم لا تعلمونهم الله يعلمهم” .
واليوم تغيرت أشكال القوة التي أعدها أعداؤنا لنا، وهذا يستدعي تغيير نمط الإعداد، من ربط الخيل والسلاح الأبيض، إلي الأسلحة الحديثة من المدافع والصواريخ والطائرات والسفن البحرية والغواصات. إذن: يجب الانتباه إلي تلك العلوم وتحصيلها،وإجراء البحوث في ذلك وتطويرها، وكل دلك يعتبر من إعداد القوة ومن الرباط فرب اختراع أغنى عن جيوش !
والبحت العلمي الذي ندعو إليه ليس مقتصراً على الجوانب العسكرية أو المدنية، بل في كل جوانب المعرفة، سواء كانت دينية أم دنيوية، فإذا كان أعداؤنا قد دخلوا علينا عن طريق رباطهم في البحوث، فأصبح البحث العلمي ثغرة يدخل الأعداء علينا منها، فعلينا أن نواجه أبحاثهم بأبحاث لا ترد كيدهم فحسب، بل تبطله.
وقد قال النبي صلي الله عليه وسلم “عينان لا تمسهما النار، عين بكت من خشية الله، وعين باتت تحرس في سبيل الله” فإن العين التي تسهر لتمحيص سنة رسول الله صحيحها من سقيمها وتكشف زيف ما يثار حولها من الشبهات، لهي عين باتت تحرس في سبيل الله، تحرس ثغراً من ثغور الإسلام.
وإن الباحث الذي يفند الشبهات التي تثار حول الإسلام وعقيدته وشريعته، لهو حارس على ثغر من ثغور الإسلام، وان الطبيب الذي يسهر على مريضه، فيجتهد في رعايته وعلاجه واختيار الدواء المناسب، لهو على ثغر في سبيل الله، وكذلك الصيدلي الذي يركب الدواء المناسب بدقه وأمانه، ويستبعد الفاسد، لهو على ثغر أيضاً، و كذلك المحلل في المختبر الذي يكشف الطفيليات والفيروسات التي تهدد الموطنين ويعطى المضادات والمبيدات المناسبة، لهو على ثغر عظيم أيضاً. وكذلك المهندس الذي يتقن صنعته وبناءه فلا يغش فيه، لئلا ينهدم على رؤوس المسلمين، لهو على ثغر في سبيل الله. فكل عمل فيه جلب مصلحة للمسلمين، أو دفع شر عنهم في دينهم أو صحتهم أو سمعتهم أو ثرواتهم، يعتبر جهاداً ورباطاً في سبيل الله، وصاحبه المحتسب عين ساهرة تحرس في سبيل الله.
-              ثغور الدراسات الإستراتيجية.
لقد أصبحت الدول تعتمد على التخطيط (الاستراتيجي) بعيد المدى، وتضع خططاً للسنوات القادمة خمسية، أو عشرية، وترصد لذلك المبالغ الطائلة ولقد أشار القرآن إلي ما يقوم به أعدائنا من مكر وكيد وتخطيط: فقال تعالى عن مكرهم بالرسول صلي الله عليه وسلم وتخطيطهم لقتله في قوله تعالى: ” إذ يمكر بك الذين كفروا ليثبتوك أو يقتلونك أو يخرجونك ويمكرون ويمكر الله والله خير الماكرين”. (سورة الانفال30)
فالتخطيط جزء من المكر والكيد، و لقد خطط أعداء الإسلام للقضاء علي الوجود الإسلامي، وقد نفذوا خطتهم، وهم يخططون مستقبلاً للاستيلاء علي المنطقة العربية، وهم يخططون الآن لإقامة الشرق الأوسط الكبير، الذي تكون فيه الهيمنة لإسرائيل ومنتجاتها، فأين المسلمون مما يراد إن التخطيط وإجراء الدراسات يحتاج إلي استقطاب الخبرات الفاعلة والمفكرين ذوي البصائر، وهذه تحتاج إلي أموال ترصد لذلك، في مواجهة أعدائنا وفيما فيه مصحتنا.
فمن الواجب، البحث عن الخبرات وجمعها، ليرابط كلُ في الثغر الذي يناسبه ويتقنه، ويقوموا بدراسة خطط الأعداء، ووضع الخطط المقابلة لكيدهم.
رابعاً: النتائج و التوصيات.
النتائج:-
-              الرباط ليس مقتصراً علي ربط الخيل في الثغور.
-              الرباط يكون في كل مكان يشكل خطراً علي المسلمين علي المدى القريب أو البعيد.
-              الرباط هو نوع من الجهاد والإعداد المستمر لكشف الخطر ومقابلته.
-              كل عمل يلازمه المسلم، بنية الحفاظ علي مصالح المسلمين يكون رباطاً.
-              توسيع دائرة الرباط، فيه فائدة عظيمة تهدف إلى قيام كافة المسلمين بالمسؤولية كل حسب مكانه ودوره ، بدلاً من حصرها بالجنود علي الحدود.
التوصيـات :-
-              توعية المسلمين بالمخاطر التي تتهددهم.
-              إيجاد مراكز عملية بحثية، لرصد مكائد الأعداء وسبل مواجهتها.
-              ربط العمل المهني والإيمان بالله عز وجل.
-              تعزيز قيمة الفرد في المجتمع المسلم عبر تشجيع المبادرة والإبداع
৮)عن واثلة بن الأسقع قال ـ قال لي رسول الله صلي الله عليه و سلم و تهاجر؟ قلت ـ نعم ـ قال هجرة البادية أو هجرة الباتة؟ قلت ـ أيهما أقضل؟ قال ــ هجرة الباتة و هجرة الباتة أن تثبت مع رسول الله و هجرة البادية أن برجع إلي باديتك (أخرح الكبراني في المعجم الكبير) ـ
উল্লেখিত হাদীসটি থেকে ২টি জিনিস বুঝা যায়ঃ
১) নির্দিষ্ট কিছু দিনের জন্য হিজরতের বিধান, চাই তা ৪০দিন হোক, কিংবা কমবেশী।
২) হিজরতে বাত্তার যে বর্ণনা দেওয় হয়েছে সে অনুযায়ী উম্মেতর জন্য এখন হিজরতে বাত্তাহ করার কোন সুরতই থাকতে পারে না, তবে হিজরতে বাদিয়াহর সুরত অদ্যাবধি বাকী আছে। যেমনঃ ৩ দিন, ১০ দিন, ৪০ দিন, ৪ মাস, ৭ মাস, ১ বছর, ৩ বছর, ইত্যাদি। যদি দ্বীনকে সমুন্নত রাখার উদ্দেশ্যে দ্বীনী ইলম শিক্ষা করা, শিক্ষা দেওয়া বা পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে হিজরত করা হয়, তবে তা এই হাদীসের আলোকে ‘হিজরতে বাদিয়া’র অন্তর্ভুক্ত হবে। তেমনি ভাবে ১০ বা ১২ বছরের জন্য মাদ্রাসা ইত্যাদিতে দ্বীনী উলূম হাসিল করার উদ্দেশ্যে নিজের প্রিয় এলাকা ছাড়াও হিজরতে বাদিয়ার অন্তর্ভুক্ত।
সারাংশঃ যারা দুনিয়ায় চিল্লা দিবে, আখেরাতে তাদের আর চিল্লা-পাল্লা করে ছুটোছুটি করতে হবে না। সুতরাং, চিল্লার মাঝে শুনি ঈমানের ধ্বনি, চিল্লার মাঝে পাই শান্তির বাণী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Pages